ad

২০২৪ সালের রমজান; রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত - Ramadan in 2024



২০২৪ সালের রমজান; রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত

আরবি বা হিজরী ক্যালেন্ডার এর নবমতম মাস হচ্ছে রমজান মাস। এটি মুসলিম ধর্মালম্বীদের কাছে সব থেকে পবিত্রতম মাস। সকল মুসলিমের নিকট এটি আত্মশুদ্ধির ও সংযমের মাস। এটি আমাদের উপমহাদেশে রোজার মাস নামে পরিচিত। বিশ্বব্যাপি মুসলিমগন এই একমাস রোজা বা সাওম পালনের মাধ্যমে ইবাদত করে থাকেন। ইসলাম ৫টি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। সাওম বা রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয়তম রোকন বা স্তম্ভ। তাই এটি ইসলামের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ মাস। মহান আল্লাহ এই মাসেই পবিত্রগ্রন্থ কুরান মাজীদ নাজিল করেছেন।

 

যেহেতু হিজরী বর্ষপঞ্জী চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল ,সেহেতু রমজান মাস কখনো ৩০ দিনে আবার কখনো ২৯ দিনে হয়ে থাকে যা হাদিস দ্বারা প্রমানিত। শাবান মাসের চাঁদ অস্তমিত হয়ে নুতন চাঁদ উঠলেই রমজান মাস শুরু এবং ইদুল ফিতরের চাঁদ উদয়ের মাধ্যমে রমজান মাসের সমাপ্তি হয়। তবে সংযমের মহিমায় আলোকিত মুসলিমগন রমজানের মহিমান্বিত বার্তা পরবর্তী রমজান পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যান।

 

রোজা বা সাওম কী?

 

রোজা বা সাওম পালন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। তাই প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলিম নর ও নারীর উপর রোজা বা সাওম অবশ্য পালনীয় ইবাদত। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী সুবেহ সাদিক (রাতের শেষভাগে যখন পূর্ব দিগন্তে আলোর রেখা ফুটে উঠে) এর পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো প্রকার পানাহার ও সঙ্গম থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে রোজা বা সাওম পালন করা। তবে শুধুমাত্র পানাহার ও সঙ্গম থেকে বিরত থাকলেই রমজানের পরিপূর্ণতা অর্জন হয়না। সকল প্রকার হারাম ও অশ্লীলতা পরিহার করে অধিক পরিমান ইবাদতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব; যা একজন মুসলিমের ঈমানী শক্তির ভিত্তিকে মজবুত করে।

 

রমজান মাসে বেশি বেশি নামাজ আদায় সহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগী পালন করা, বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা, সন্ধ্যায় পরিবার ও বন্ধুদের সাথে একত্রে ইফতার করার মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করার জন্য পরিচিত। এই মাসেই নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের উপর ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে রমজান মাস ইসলামের বিশেষ গুরুত্ব ধারণ করে।

 

২০২৪ সালে রমজান কবে থেকে শুরু হবে?

 

যেহেতু রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল সেহেতু নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন ঠিক কবে থেকে রোজা শুরু হবে। তবে আগামী ১০ মার্চ বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; সেহেতু পরদিন অর্থাৎ ১১ ই মার্চ থেকে থেকেই রোজা শুরু হবে। ১০ মার্চের পরিবর্তে ১১ই মার্চ পবিত্র রমজানের চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ১২ই মার্চ থেকে রমজান শুরু হবে। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে মধ্যপ্রাচের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের রমজান মাস পালনে একদিনের পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণত ভারতীয় উপমহাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রমজান শুরু ও শেষ করতে দেখা যায়। যদিও উপমহাদেশের অনেক জায়গায় মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে অনেকেই রমজান ও ঈদ পালন করে থাকে।

 

রমজানের অনুশাসন

 

রমজানে সব থেকে পরিচিত ফজিলতপূর্ণ দুটি কাজ হচ্ছে সেহরি ইফতার করা। রোজা বা সাওম পালন করার উদ্দেশ্যে সুবেহ সাদিকের পূর্বে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তাকে সেহেরি বলে। একই সাথে সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও সঙ্গম থেকে বিরত থাকার পর ইসলামী রীতি অনুযায়ী মাগরীবের পূর্বে রোজা ভঙ্গ করার জন্য যে খাবার গ্রহণ করা হয় তাকে ইফতার বলে।

 

প্রচলিত ইসলামী রীতি অনুযায়ী সূবেহ সাদিকের পূর্বে সেহরি গ্রহণের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইফতার করে রোজা ভঙ্গ করার পূর্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় যে কোন প্রকার পানাহার ও সঙ্গম থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে রোজা বা সাওম পালন করা।

 

সেহরি

 

সাওম বা রোজা পালনের উদ্দ্যেশ্যে সুবেহ সাদিক তথা ভোর রাতে খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে রোজার নিয়ত শুরু করাকে ইস্লামী পরিভাষায় সেহরি বলা হয়।

 

ইফতার

 

সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও সঙ্গম থেকে বিরত থাকার পর ইসলামী রীতি অনুযায়ী মাগরীবের পূর্বে রোজা ভঙ্গ করার জন্য যে খাবার গ্রহণ করা হয় তাকে ইফতার বলে।

 

তারবীহর নামাজ

 

রমজান মাসে এশার নামাজের পর রাতের সালাত হিসেবে যে সুন্নাত নামাজ আদায় করা হয় তাকে তারাবীহর সালাত বলে।

শবে কদর

 

শবে কদর বা লাইলাতুল কদরের রাত বা রজনী হচ্ছে বছরের সবথেকে পবিত্রতম রাত। কেননা এই রাত্রে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন মহাপবিত্র গ্রন্থ আল কুরান নাজিল করেছেন। তাই এটি সকল মুসলিমের নিকট মহিমান্বিত রাত্রি। এই রাতের ইবাদতকে হাজার রাতের ইবাদত অপেক্ষা বেশি ফজিলত পূর্ণ মনে করা হয়। এই রাত্রে মুসল্লিগন ইশার পর থেকে ফজরের পূর্বপর্যন্ত ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকেন। রমজানের কোন রাত্রিতে শবে কদর আসবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। রমজানের শেষ ১০ দিনের যেকোনো বিজোড় রাত্রিতে শবে কদর হতে পারে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত ২৭ রমজান দিবাগত রাতে শবে কদর পালন করা হয়। কেননা এই রাতেই সবথেকে বেশি সবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

‘’লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।“ ------আল কুরান (সূরাঃ আল ক্বাদর, আয়াতঃ ৩)

 

রমজানের গুরুত্ব ফজিলত

 

রমজানের রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। এটি আল্লাহর প্রতি আধ্যাত্মিক প্রতিফলন, আত্মশৃঙ্খলা এবং ইস্লামের প্রতি ঈমানী শক্তিকে বলীয়ান করে। ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, সঙ্গম, খারাপ আচরন থেকে বিরত থেকে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ব্রিদ্ধির সাথে সাথে ইসলামের প্রতি নিজের আনুগত্যকে স্পষ্ট করে। ্যা ইহকাল ও পরকালে মুমিন ব্যাক্তির কল্যাণে কাজ করে।

 

রমজানের ধর্মীয় গুরুত্ব

 

রহমত মাগফিরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে রমজান আসে ইসলামের মাহাত্ম্যকে সঙ্গে করে। সকল প্রকার গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামী জীবনাদর্শে নতুন করে জীবন শুরু করার প্রয়াসই হচ্ছে রমজানের মাহাত্ম্য। সকল প্রকার গুনাহ থেকে নিজেদের হেফাজত করা সারা বছরই আমাদের কর্তব্য। কিন্তু পারিবারিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই তা পেরে ওঠেন না। কিন্তু রমজান মাসে সেই পারেপার্শ্বিক অন্যায়কে ঠেলে আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাহাত্ম্যকে ধারণ করে। রমজান আসলেই দেখা যায় মুসলিম ধর্মালম্বীরা অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল হন। অন্যায় কাজের পরিধি সীমিত হয়ে আসে।

 

অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে বেশি বেশি নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত,‌ জিকি্‌ অধিক দান সদকা আদায়, অধিক নফল ইবাদতে মশগুল হওয়া ইত্যাদি একজন মুসলিমের ধর্মীয় চেতনাকে আরো বেশি ধারালো করে তোলে। অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি, অন্যায়-অত্যাচার, অন্যের হক মেরে খাওয়া, সুদ, ঘুষ, যৌতুক আদান-প্রদান ইত্যাদি থেকে সারা বছরই বিরত থাকা উচিত। তবে রমজান মাস আসলেই বিরত থাকার অপরিহার্যতা বহুগুনে বেড়ে যায়। ফলে ধর্মীয় বিধি নিষেধ মান্য করা সহজ হয়ে যায়। ফলে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায়।

 

“হে মুমিনগন, তোমাদের উপর সিয়াম (রোজা) ফরয করা হয়েছে। যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা ত্বাকওয়া অর্জন কর।“ --------আল কুরান।

 

রমজানের সামাজিক গুরুত্ব

 

সারা বছরের তুলনায় রমজান আসলে সমাজে অন্যায়ের পরিমাণ বহুলাংশে কমে যায়। মানুষের মধ্যে অধিক পরিমাণ ধর্মীয় চেতনা কাজ করে। যার ফলশ্রুতিতে তারা ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলায় অধিক মনোযোগী হয়। ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে যায়।

 

অপরদিকে রমজান আসলে ধনীদের মধ্যে অধিক পরিমাণ দান সদকা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যার দ্বারা সমাজের অসহায় ও নিঃস্ব মানুষেরা উপকৃত হয়; যা পক্ষান্তরে সমাজেরই উপকার। এছাড়াও রমজানের মহিমা মুসলিম ভাতৃতের সৌহার্দ্য রক্ষা করে।

 

রমজানের ফজিলত

 

রমজান হচ্ছে গুনাহ মওকুফের মাস। ফজিলত পূর্ণ এই মাসে অধিক পরিমাণে ইবাদত করার মাধ্যমে নিজেদের গুনাহ মওকুফের পাশাপাশি অধিক সওয়াব হাসিল করার মাধ্যমে পরকালের কল্যাণ নিশ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসকে পরিত্রাণের মাস হিসেবে আমাদের নিকট প্রেরণ করেন। রমজানের প্রথম দশ দিনকে রহমত, পরবর্তী ১০ দিনকে মাগফেরাত এবং সর্বশেষ দশ দিন কে নাজাত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রথম 10 দিনে বান্দাদেরকে রহমত ও বরকত দ্বারা পরিপূর্ণতা দান করেন। মধ্যবর্তী দশ দিন মাগফিরাতের দশ দিন আল্লাহ তায়ালার নিকট আখিরাতের জন্য মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। যা দ্বারা পরকালে জান্নাত নিশ্চিত হয়। অপরদিকে শেষ দশ দিন হচ্ছে গুনাহ মওকুফের সময়। মুসলিম গণ তাদের যাবতীয় গর্হিত কাজের জন্য বেশি বেশি ক্ষমাপ্রার্থনা করে থাকেন। যাতে তারা তাদের পূর্ববর্তী সকল গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। রমজান মাসের ইবাদত অন্যান্য মাস অপেক্ষা ঠিক ফজিলতপূর্ণ।

 

রমজান সম্পর্কিত হাদিস

 

“মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখলো, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হলো। --------(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নংঃ ১৬৪১) “

 

“মহানবী সাঃ আরো বলেছেনঃ যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান অভিশপ্ত জিনদের শেকল বন্দী করা হয়। জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়। অতঃপর একজন ঘোষক ডেকে বলেন, হে সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি অগ্রসর হও, হে অসৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি থেমে যাও। মহান আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রতিটি রাতে অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন। --------(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নংঃ ১৬৪২)”

 

 

উপসংহার

 

রোজা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ইবাদত। সকল প্রাপ্তবয়স্ক নর নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা রোজা ভঙ্গকারীকে কঠিন শাস্তি ও সঠিকভাবে রোজা পালনকারী ব্যক্তিকে নিজ হাতে পুরস্কার দেয়ার কথা বলেছেন। এ থেকেই বোঝা যায় ইসলাম ধর্মে রোজার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য কত বেশি। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মোমিনকে রমজানের মাহাত্ম্য দ্বারা আলোকিত হওয়ার তৌফিক দান করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটি দর্পণ'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ad
ad
ad
ad